একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ঈদ গল্প!
এমদাদ হোসেন শরীফ :
‘জগতে চলতে ফিরতে কত কিছুই তো করতে হয়!
‘এই করতে পারার চেষ্টাটা সবার মধ্যে থাকে না। সবাই পারেও না। যারা পারে কেবল তারাই সামনের দিকে আগায়। বীর যুবক হিসেবে আবিভূর্ত হয় প্রেমিকাদের চোখে। আমি ঠিক করছি কাল থেকে একটা নতুন প্রকল্প হাতে নিব। সেই প্রকল্প দিয়া প্রেমের সব হিসাবনিকাশ পাল্টে দিব।’
‘বাবু ভাই আপনার হইছে কী? এরিস্টটল হইয়া যান নাই তো! কীসব দার্শনিক টাইপ কথা! ফোন দিয়া এইসব বলার জন্য ডাকছেন?’
‘এজন্যই বলি, তোরা মুরব্বি চিনস না! মুরব্বিদের কথার কোনো দাম না দিয়া আগ বাড়ায়ে কথা কস! আগে সবটা শুনবি তো, নাকি?’ আমি ভিতরে ভিতরে আল্লাহর নাম জপতেছি। এই লোক আবার কোন ফন্দি আঁটে কে জানে? কয়েকদিন পর কোরবানির ঈদ। বড় চিন্তায় আছি, ঈদটাই না জানি আবার মাটি হয়ে যায়… ওই কী রে শুনবি না সবটা?’
‘ভাই না শুনে কী উপায় আছে! আপনার প্যাঁদানি তো পুলিশের রিমান্ডের চাইতেও বেশি।’
‘মনে হয় চামে একটু অপমান করে ফেললি?’
‘ছিঃ ভাই, কী যে কন না এসব! আপনে আমাগো মহল্লার বড়ভাই। আপনার উপ্রে কোনো দিন কোনো কথা বলছি বলেন? তয় ভাই ক্যাঁচালটা কি নীরা আপুকে নিয়া? গতবার তো কদম দিতে গিয়া ধরা খাইলাম পুলিশের হাতে। এবারও…’
‘শোন, এবার একটা ডুয়েল পলিসি হাতে নিছি। ঈদকে সামনে রেখে টুকটাক ব্যবসাও হবে। আবার সেই ব্যবসার প্রজেক্ট থেকে নীরাকে প্রেম নিবেদন করা হবে। বলতে পারিস, এক ঢিলে দুই পাখি!’
‘ভাই, অনুমতি দিলে ছোট মুখে একটা বড় কথা বলতে চাই।’
‘ওই বেটা, ভণিতার কী আছে! আমি কি তোর প্রেমিকা হই যে ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে বলতে হবে। জীবনটা হলো সরল গণিত, বুঝলি? আর তোরা সব জটিল বানিয়ে ফেলিস। সরাসরি বলে ফেল।’
ভিতর থেকে কয়েক দানা সাহস সঞ্চয় করে কণ্ঠে কোমলতা এনে বললাম, ‘ভাই গরু-ছাগলের ব্যবসায় হাত দিলেন নাকি? কোরবানির ঈদের সময় সিজনাল এই ব্যবসাটা অনেকে করে।’ কথাটা শুনে বাবু ভাই যেই না একটা ধমক দিল, জানের পানি আমার অর্ধেক শুকিয়ে গেল! বাবু ভাই, সিনা টানটান করে কণ্ঠে দৃঢ়তা এনে গর্বের সঙ্গে বলতে লাগল, ‘আমি কি এত আনস্মার্ট রে! হয়তো মাথার চুলগুলো ঝরে পড়ছে ইদানীং। বাকিগুলাও ঝরে পড়ার তালিকায় আছে। তাই বলে ক্ষেত হইয়া যাই নাই একেবারে। আমারে দিয়া এই সমাজ চাষাবাদ করবে। আমরা ঈদ কার্ডের দোকান দিব। টাকাপয়সা সব আমার। তোরা শুধু সময় দিবি। ঈদ কার্ডের ভাঁজে ভাঁজে নীরাকে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়া হবে। শুধু প্রস্তাব না একটা হুমকিও দিতে চাই। এবার যদি আমার প্রেমে সাড়া না দেয়, তাহলে সুইসাইড করমু।’
‘ভাই, প্লিজ এত বড় অঘটন ঘটাবেন না! আমরা আপনাকে হারাতে চাই না।’
‘তোদের দিয়ে হবে না! পুরো কথা না শুনেই ইমোশনাল হয়ে যাস। ইমোশনাল হওয়ার কথা নীরার, তোদের না। জানিস তো রবি ঠাকুর—বুইড়া বেটা নীরার খুবই প্রিয়। রোজার ঈদে অন্য পাড়ার খাটাস পল্টুর দোকান থেইকা নীরাকে ঈদ কার্ড কিনতে দেখছিলাম। সুযোগটা হাতছাড়া করা যাবে না। আমাদের পাড়ায়ও ঈদ কার্ডের দোকান হবে কাল থেকে।’
‘সাব্বাশ ভাই, আইডিয়া পছন্দ হইছে। আপনি তো আইনস্টাইনের কাছাকাছি। আপনার চমকপ্রদ আইডিয়াগুলো শুধু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে অবহেলিত হয়ে পড়ে থাকে। ভুল দেশে জন্মগ্রহণ করলে যা হয়। আইনস্টাইন এদেশে জন্মগ্রহণ করলে হতো আদার বেপারি। তার কাজকাম দেখে সবাই বলত, আইছে আদার বেপারি জাহাজের খবর নিতে।’ ভিতরে ভিতরে আমি মহাখুশি। এই প্রথম ভাইয়ের কোনো আইডিয়া আমার মনে ধরেছে। ভাইয়ের যেমন নীরা আপু আছে, আমারও আছে মিমি।
আমিও চেয়েছিলাম ওপার বাংলার নায়িকার মতো এদেশের কোনো এক মিমি গলায় মধু ঢেলে না হোক বিষ মাখিয়ে বলুক, ‘এই ছেলে আমায় ভালোবাসো? নিয়মিত ফেসবুকে আমার ছবিতে লাইক-কমেন্ট-শেয়ার করার সাহস আছে? মেগাবাইট দিয়ে ফেসবুক চালাও না ফ্রি ফেসবুকিং? যদি মেগাবাইট থাকে তবেই প্রেম করতে এস।’ আফসোস, কেউ এল না লাইফে এসব বলার জন্য!
মহা ধুমধামে আমরা মাঝারি মানের একটা দোকান দাঁড় করিয়ে ফেললাম। পাড়ার তিন রাস্তার মোড়ে। বেচাবিক্রি ভালোই চলছে। ছোট-বড় সব ছেলেমেয়েই ঈদ ভিউ কার্ড কিনছে। বাবু ভাইয়ের বেচাবিক্রির দিকে খেয়াল নেই। স্পেশাল কিছু ঈদ ভিউ কার্ড আছে দোকানে। রবি ঠাকুর ‘বুইড়া বেটা’র ছবিযুক্ত কার্ড। খামের ভিতরে লেখা—‘প্রেম দাও মোরে প্রিয়তমা, প্রেম দাও! নইলে ঈদের দিনই সুইসাইড খেয়ে তোমার প্রেমে কোরবানি হয়ে যাব।’ প্রায় পঞ্চাশটা কার্ড। যার সবক’টায় রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন স্টাইলের ছবি ও বাবু ভাইয়ের হাতের লেখা বাণী ‘প্রেম দাও মোরে’। যে কেউ এসব কার্ড পছন্দ করে কিনতে চাইলে আমরা বলে দিই এসব বিক্রি হয়ে গেছে।
হঠাত্ মিমি ও তার মা একসঙ্গে দোকানে চলে এল। মিমিকে আজ অসম্ভব সুন্দর লাগছে। ‘স্লামুআলাইকুম আন্টি, কেমন আছেন?’ বলে বাবু ভাই খোঁজখবর নিতে লাগলেন মিমির মায়ের। মিমির মায়েরও সে কী ভাব! আসল কথা, আন্টি বাবু ভাইকে খুব পছন্দ করেন। এ পাড়ার সবচেয়ে সুবোধ ছেলে হিসেবে বাবু ভাইকেই জানেন তিনি। ‘বাবা বাবু, মিমিকে কয়েকটা ঈদ কার্ড দেখাও। মিমি আমাকে ধরে নিয়ে এল। ও একা কিনবে না। আমাকে নিয়ে কিনবে।’
হায়! মিমি বেছে বেছে রবীন্দ্রনাথের ছবিযুক্ত একটা কার্ড নিল। অথচ, ওর জন্য আমিও কয়েকটা ঈদ ভিউ কার্ড আলাদা করে রেখেছিলাম। লিখেছিলাম ‘গলায় মধু ঢেলে হাতে গোলাপের সুবাস’ টাইপ রোমান্টিক সব শব্দের খেলা। এখন সব খেল খতম। বাবু ভাই আর আমি একজন আরেকজনের চোখে চাওয়াচাওয়ি করি। কী ঘটল ব্যাপারটা! এরমধ্যে মিমিরা কার্ড নিয়ে বাসায় চলে গেছে। মিনিট কয়েক বাদে, দূর থেকে নীরা আপাকে আসতে দেখা গেল কিন্তু তারও আগে মিমির মাকে ঈদ কার্ড হাতে আগুন চোখে আমাদের দিকে আসতে দেখা যাচ্ছে। এখন, কী করব! জীবন নিয়া দৌড় দিব নাকি নীরা আপুকে ঈদ কার্ড দেখাব…
অন্যরা এখন যা পড়ছেন
পুষ্পাবাদকারী
আমিনুল ইসলাম মামুন : আবাদের জন্য সুনিপুণ প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়াটা অত্যাবশ্যক। শীতলতা ছাড়া ভালো ফুল ফোটানো খুব একটা সম্ভব হয়বিস্তারিত পড়ুন
রুপার চোখে জল
আমিনুল ইসলাম মামুন : এই পথে প্রতিদিন সকালে অফিসে যায় আদিত্য। শান্ত চেহারার ছেলেটি সুঠাম দেহের অধিকারী। গায়ের রং উজ্জ্বল।বিস্তারিত পড়ুন
দায়িত্ব ও একটা ভালবাসার গল্প
সেই দিন বাবা খুব চিন্তায় ছিলেন। বাবাকে খুব অস্থির লাগছিল। তিনি এই ঘর ওই ঘর করছিলেন। বাবা খুব চেষ্টা করছিলেনবিস্তারিত পড়ুন


