Wednesday, October 29, 2025

মুক্ত লেখনী

প্রধান ম্যেনু

সাহিত্য পত্রিকা

বাবার চিঠি; আকিদুল ইসলাম সাদী

গাছপালায় ঢাকা বিশাল বাড়িটি। দেখতেও বেশ সুন্দর! তবে বাড়িটিতে তেমন কোন লোকজন নেই। এতো বড় বাড়িতে শুধুমাত্র রহমত আলী আর তার স্ত্রী বাস করে! যদিও তার পরিবারের লোক সংখ্যা পাঁচজন। তারা স্বামী-স্ত্রী এবং ছেলে, ছেলের বউ আর একটি মাত্র নাতি। তবে বাড়িতে থাকে তারা দুই বুড়ো-বুড়ি। আর ছেলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে শহরে থাকে। বাড়িতে তেমন আসে না। মাস শেষে মা-বাবার জন্য টাকা পাঠিয়ে দেয়। মা বাবাকে দেখতে আসার তেমন কোন প্রয়োজন মনে করে না। শুধু টাকা পাঠিয়েই তার দায়িত্ব শেষ হয়ে গেছে বলে মনে করে। অন্যদিকে মা-বাবার মনে তা সয়না! ছটফট করে বুকের মানিককে দেখার জন্য। অনেকবার বাড়িতে আসার জন্য ছেলেকে খবর পাঠিয়েছে, তবু সে আসে নি। না পেরে রহমত আলী ও তার স্ত্রী শহরে যাওয়ার অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু ছেলের অসম্মতির কারণে আর যাওয়া হয় নি! অবশেষে একদিন রহমত আলি দুঃখ প্রকাশ করে ছেলের নিকট চিঠি পাঠালো

স্নেহের পুত্র,
জানি না তুমি কেমন আছো! চাকরী এবং ব্যবসা নিয়ে তুমিতো বড়ই ব্যস্ত সময় পার করো। যারকারণে বৃদ্ধ মা-বাবাকেও মাসে বা বছরে একবার বাড়িতে এসে দেখে যাওয়ার সুযোগ পাও না। তবে বাবা! আমরা তোমাকে না দেখে থাকতে পারি না। কেননা, তুমিই আমাদের একমাত্র সন্তান। তোমাকে দেখতে পেলে আমাদের হৃদয়টা প্রশান্তি লাভ করে! তুমি ছাড়া আমাদের আর কোন সন্তান নেই। যদি থাকতো, তাহলে হয়তো বা তাকে দেখে মনকে শান্তনা দিতাম! কিন্তু তাওতো পারি না! আমাদের একমাত্র নাতি অর্থাৎ তোমার সন্তানকেও কাছে পাই না। তার কচি মুখ থেকে দাদা-দাদি ডাকটাও শুনতে পাই না! তার কমল কণ্ঠে দাদা-দাদি ডাক শোনার জন্য আমাদের এই খালি বুকটা যেন হাহাকার করে! জানি না তা কখনো শুনতে পারবো কিনা!
জানো বাবা! তোমাদের বিরহে বাড়িটাও যেন হাহাকার করে! সর্বদা যেন তোমাদের পদচিহ্নের অপেক্ষা করতে থাকে! বাবা জানো! নিজেদের সকল পুঁজি করা ভালোবাসা আর স্নেহের পরশ দিয়ে তোমাকে আগলে রেখে কেন বড় করেছিলাম? যাতে করে আমাদের অসহায় আর একাকিত্বের সময় তুমি পাশে থাকো, সেজন্য! কিন্তু না, আজ সম্পূর্ণ এর বিপরিত হচ্ছে। তুমি ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে বহু দূরে রয়েছো। বছরে একটি বারের জন্যও আমাদেরকে দেখতে আসার সময় পাও না! মাস শেষে শুধু টাকাটা পাঠিয়ে দিয়েই তোমার দায়িত্ব শেষ, এমনটি মনে করছো!
বাবা তোমার কাছে আমার অনুরোধ রইলো, যদি আমাদেরকে দেখতে আসতে না পারো, তাহলে তোমার কষ্ট করে আর টাকা পাঠাতে হবে না। কারণ, তোমার টাকা পাওয়ার জন্য আল্ল¬াহর নিকটে তোমাকে আমরা চাইনি। তোমাকে দুনিয়ার মুখ দেখিয়েছিলাম, বৃদ্ধ বয়সে তোমার সান্নিধ্য ও ভালোবাসা পেতে। তোমাকে আদর-সোহাগ দিয়ে বড় করেছিলাম, বৃদ্ধ বয়সে তোমার সেবা পাবো বলে। কিন্তু আজ আমরা এ সবকিছু থেকেই বঞ্চিত। সুতরাং তোমার টাকা দিয়ে আর কী করবো! বাবা জানো! পৃথিবীর বুকে যেন তোমার ছোট না হতে হয়, সেজন্য নিজেদের শ্রম আর পরিশ্রম দিয়ে তোমাকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছিলাম। আজ তুমি সবকিছু পেয়েছো। সে কারণে নিজেকে স্বয়ং সম্পূর্ণ মনে করে আমাদের প্রতি তোমার দায়িত্ব এভাবে ভুলে গেলে? এ জন্যই কি আমরা তোমাকে কোলে-পিটে করে লালন-পালন করেছিলাম? দোয়া করি আল্লাহ তোমাকে আরো বড় করুক! আর বেশি কিছু লেখে তোমার ব্যস্ত সময় নষ্ট করছি না। ভালো থেকো বাবা! আল¬াহ হাফেজ!
ইতি
তোমার হতোভাগা পিতা
রহমত আলী!

অতপর ছেলের উদ্দেশ্যে চিঠিটা পোস্ট করে দিলো।

চিঠি পর্যায়ক্রমে গিয়ে পৌঁছলো ছেলের নিকট। বাবার চিঠি পেয়ে ছেলে কিছুটা বিরক্তবোধ করলো। বিশেষ করে লেখার ধরণটা দেখে! সে ভাবলো, আমার বাবা কতো নিষ্ঠুর! তিনি জানেন যে, আমি এখানে কতো কাজে ব্যস্ত থাকি, কতোটা কষ্ট করে তাদেরকে টাকা পাঠাই! তারপরও আমাকে এমন ভাষায় চিঠি লিখলেন? যাক! চিঠি যেহেতু লেখেছে, বাড়িতে গিয়ে তাদেরকে একবার দেখে আসি। পরদিন সে বাবা-মাকে দেখতে গ্রামে গেলো। বাড়িতে পৌঁছেই তার দেখা হলো মায়ের সাথে। তাকে বললো, মা কেমন আছো?

অনেক দিন পর ছেলেকে দেখে জড়িয়ে ধরে ভালো আছি বলেই মা হু-হু করে কেঁদে ফেললেন। তার কান্নাতো আর থামে না! অজ¯্র ধারায় তিনি কেঁদে চললেন। ছেলে অনেক শান্তনা দিয়ে মায়ের কান্না বন্ধ করলো। অতপর বললো, মা! বাবা কোথায়? মা বললেন, বাড়ির পিছন বারান্দায় বসে আছেন। ছেলে সেখানে গিয়ে বাবাকে বললো, বাবা কেমন আছো? বাবা বললেন, ভালো আছি। আর কোন কথা বললেন না। দুজনেই নিরব! এভাবে কেটে গেলো মিনিট দশেক। তারপর রহমত আলী একটি গাছের দিকে লক্ষ্য করে বললো, বাবা ওটা কী? ছেলে দেখলো গাছের ডালে একটি কাক বসে আছে। তাই সে বললো, ওটাতো কাক। রহমত আলী আর কিছু বললেন না। কিছুক্ষণ পর আবার তিনি একই ধরণের প্রশ্ন করলেন। ছেলে একই প্রশ্ন আবার শুনে একটু রেগে গেলো। কিন্তু রাগ প্রকাশ না করে বললো, বললামতো ওটা কাক! অতপর আরো কিছুক্ষণ পর রহমত আলী একই প্রশ্ন আবার করলেন। ছেলে যেন এবার তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো। রাগ এবার যেন তার মাথায় চড়ে বসলো। রাগান্নিত কণ্ঠে বললো, তোমাকে কি ভীম রতিতে ধরেছে? আমি বার বার বলছি যে ওটা কাক, আর তুমি একই প্রশ্ন করছো? বসে বসে খেয়ে কি শুধু এই সব উডবট প্রশ্ন করা শিখেছো? রহমত আলী একটুও রাগলেন না! শুধু স্ত্রীকে ডেকে বললেন, আলমারি থেকে আমার ডায়রিটা নিয়ে এসো! ছেলের এমন ব্যবহার দেখে মায়েরও খুব খারাপ লাগলো। তবে কিছু না বলে তিনি চোখ থেকে অশ্রæ ঝরালেন। অতপর স্বামীর আদেশে আলমারি থেকে ডায়রিটা এনে দিলেন। রহমত আলী পৃষ্টা উল্টিয়ে উল্টিয়ে একটি জায়গা বের করে ছেলেকে বললেন, বাবা আমার চোখেতো সমস্যা, ভালোভাবে তেমন কিছু দেখতে পাই না। তুমি যদি এই লেখাটা আমাকে একটু পড়ে শুনাতে, অনেক ভালো লাগতো! তার কথায় ছেলে ডায়রিটা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলো….

“আমার বাবুর বয়স আড়াই বছর। একটু একটু করে সে কথা বলতে শিখেছে। আমাকে যখন বাবা বলে ডাক দেয়, তখন কলিজাটা জুড়িয়ে যায়। মনে লাগে সীমাহীন আনন্দ! আজ তাকে কোলে করে বাড়ি পিছন উঠানে জলচৌকির উপর বসেছিলাম। বসন্তের দিন। হঠাৎ করে গাছে একটি কোকিল পাখি ডেকে উঠলো। আমার বাবু ওটা দেখে বললো, বাবা ওতা কী? আমি বললাম, বাবা! ওটা পাখি। সে আবার প্রশ্ন করলো। আমি আবার উত্তর দিলাম। এভাবে সে আমাকে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ বার একই প্রশ্ন করলো। আর আমি প্রতিবারই উত্তর দিলাম। আমার একটুও বিরক্ত লাগলো না। তার প্রতিবারের প্রশ্নের উত্তর দিতে আমার যেন আলাদা আলাদা স্বাদ লাগছিলো”।

ছেলে আর পড়তে পারলো না। অশ্রæতে তার চোখ ছলছল করতে লাগলো! না পেরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। নিজেকে মনে হলো খুবই অপরাধী। অতপর বাবার পায়ে ধরে সে মাফ চায়লো! যে বাবা-মা তাকে এতো কষ্ট করে লালন-পালন করেছেন, আজ তাদেরকে সে তুচ্ছ মনে করছে! যাঁরা তার হাজার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন কোন বিরক্ত ছাড়া! আজ তাদের একটি মাত্র প্রশ্নের উত্তর দিতে সে বিরক্তবোধ করেছে! রেগে গেছে তাদের উপর। এ অপরাধ ক্ষমাযোগ্য নয়! বাবার পায়ে ধরে সে কেঁদেই চললো আর বলতে লাগলো বাবা আমাকে মাফ করে দাও! আমি তোমাদেরকে ছেড়ে আর দূরে থাকবো না। কালই সবাইকে নিয়ে তোমাদের কাছে চলে আসবো! আমি আর চাই না টাকা-পয়সা। চাই শুধু তোমাদের এই নিখাদ ভালোবাসা। এর কাছে আমার সবকিছু তুচ্ছ। রহমত আলী ছেলের করুণ অবস্থা দেখে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন! কাঁদতে শুরু করলেন তিনিও!

অতপর পরদিন রহমত আলীর ছেলে শহরে গিয়ে সবাইকে গ্রামে নিয়ে এলো। বাস করতে লাগলো মা-বাবার সাথে আনন্দচিত্তে¡…..!

অন্যরা এখন যা পড়ছেন

পুষ্পাবাদকারী

আমিনুল ইসলাম মামুন : আবাদের জন্য সুনিপুণ প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়াটা অত্যাবশ্যক। শীতলতা ছাড়া ভালো ফুল ফোটানো খুব একটা সম্ভব হয়বিস্তারিত পড়ুন

রুপার চোখে জল

আমিনুল ইসলাম মামুন : এই পথে প্রতিদিন সকালে অফিসে যায় আদিত্য। শান্ত চেহারার ছেলেটি সুঠাম দেহের অধিকারী। গায়ের রং উজ্জ্বল।বিস্তারিত পড়ুন

দায়িত্ব ও একটা ভালবাসার গল্প

সেই দিন বাবা খুব চিন্তায় ছিলেন। বাবাকে খুব অস্থির লাগছিল। তিনি এই ঘর ওই ঘর করছিলেন। বাবা খুব চেষ্টা করছিলেনবিস্তারিত পড়ুন

  • স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখার অপেক্ষা
  • রহস্যময় রজনী
  • একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ঈদ গল্প!
  • তিন পথিকের গল্প ও বাংলাদেশ
  • রিকশা চালকের ছেলে সজিব; আকিদুল ইসলাম সাদী
  • উত্তম আদর্শ
  • তুমি কেন মুক্তিযোদ্ধা হতে পারোনি
  • হাইওয়ে || মশিউর রহমান শান্ত
  • পথটি মন্দ হলেও ভালবাসার যোগ্য
  • প্রবাসী | আলাউদ্দিন আদর
  • শেষচিঠি | মহিউদ্দিন মাসুদ রানা
  • ভালো আছি, ভালো থেকো
  • ভালবাসার প্রথম চিঠি!
  • একটি সাদামাটা প্রেমের গল্প
  • শাদা হাতি চুরি-বৃত্তান্ত
  • রুপার চুড়ি মুল্করাজ আনন্দ